চিকিৎসক ও নার্সসহ করোনা যোদ্ধাদের চিকিৎসাকেন্দ্রের আশপাশেই থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি তুলেছে ১৪ দল। সোমবার (১৩ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে ১৪ দলের পক্ষ থেকে এ দাবি তোলা হয়। বিবৃতিতে চাল নিয়ে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের জাতীয় শত্রু আখ্যায়িত করে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি তোলা হয়।
১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে শেখ হাসিনার সব নির্দেশনা মেনে স্বাস্থ্যবিধি অনুযায়ী জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে। ১৪ দল মনে করে, নিজেদের সুরক্ষার স্বার্থেই দেশবাসীকে কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে এখন জনসমাগম পরিহার করতে হবে। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ঘরে থাকতে হবে।
নানা অজুহাতে আমরা ঘর থেকে বের হচ্ছি উল্লেখ করে ১৪ দলের বিবৃতিতে বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে ঘর থেকে বের হওয়ার কারণে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া এই করোনা বাংলাদেশকে চরমভাবে আঘাত করবে। সরকার বা প্রশাসনের পক্ষে তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না। দেশের জনগণের স্বার্থে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারাও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। এছাড়া ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা এই যুদ্ধে ফ্রন্টলাইন ফাইটার হিসেবে কাজ করছেন।
করোনা মোকাবিলায় সবাইকে সমন্বয় করে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে ১৪ দলের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়হীনতার অর্থ বর্তমান বিপর্যয়কে আরও ঘনীভূত করা। ইতোমধ্যে আমরা গার্মেন্টস খোলা-বন্ধ নিয়ে এক অচল অবস্থা লক্ষ্য করেছি। বিদেশ ফেরতদের তাৎক্ষণিকভাবে ঘরে বা প্রাতিষ্ঠানিক হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করায়ও গাফিলতি লক্ষ করেছি। এসব বিষয় কঠোরভাবে সমন্বয় করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের। এক্ষেত্রে কোনও ধরনের অজুহাত গ্রহণযোগ্য নয়। এজন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী, সচিব ও ডিজিসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাময়িক বিশ্রাম ছাড়া সব সময়ের জন্য নিজ অফিসে অবস্থান করে নিবিড় সমন্বয় সাধন করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, যে সব চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছেন, তাদের অবিলম্বে চিকিৎসাকেন্দ্রের পার্শ্ববর্তী কোনও ভালো হোটেলে রাখা ও খাওয়া-দাওয়ার সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা করতে হবে। জরুরিভাবে যানবাহন সুরক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই মুহূর্তে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অহেতুক পরিস্থিতি জটিল করবে।
চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত প্রণোদনার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা মনে করি, আমাদের চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা সরকারি বা বেসরকারি যেকোনও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে রোগীর পাশে দাঁড়াতে দ্বিধাবোধ করবেন না। তাদের পেশার ধর্মই হলো যেকোনও পরিস্থিতিতে রোগীর সেবা করা।
বিবৃতিতে ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলা হয়, কিছু দুর্নীতিবাজ ত্রাণসামগ্রী আত্মসাৎ করার চেষ্টা করছে। এসব আত্মসাৎকারী দেশ ও জাতির শত্রু। তাদের কোনও দল নেই, ধর্ম নেই। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাঙালি জাতি চিরদিনই যেকোনও দুর্যোগকে সাহসের সঙ্গে অতিক্রম করেছে। দল মত নির্বিশেষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমানের এই দুঃসময়কেও পরাজিত করবো ইনশাআল্লাহ।
১৪ দলের বিবৃতিদাতারা হলেন— আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সামাবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ, জতীয় পাটির (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মোফাজ্জেল হোসেন চৌধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারি, বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক ডা.
শাহাদাত হোসেন, গণআজাদী লীগের সভাপতি এস কে শিকদার, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, কমিউনিস্ট কেন্দ্রের ডাক্তার ওয়াজেদুল ইসলাম ও বসদের রেজাউর রশিদ চৌধুরী।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই