ভিন্নবার্তা প্রতিবেদক: দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হলেও এখনো নাগিনীরা নিঃশ্বাস ছড়াচ্ছে, সকলকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আজকে আমরা সবাই বলছি যে, আমরা স্বাধীন হয়েছি, হয়ত স্বাধীন হয়েছি,হয়ত হয়েছি। কিন্তু এখনো চতুর্দিকে নাগিনীরা ছড়াচ্ছে নিঃশ্বাস। সেই দলের চক্রান্ত বিভিন্নভাবে ছড়াচ্ছে এবং এরা আমাদেরকে বিভক্ত করবার চেষ্টা করছে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক স্মরণ সভায় বিএনপি মহাসচিব দেশবাসীর প্রতি এই আহ্বান জানান। বিএনপির উদ্যোগে ছা্ত্র-জনতার আন্দোলনসহ গত ১৭ বছরে নিহতদের স্মরণে এই সমাবেশ হয়। সমাবেশে গত ১৭ বছরে গুম হওয়া, খুন হওয়া কয়েক‘শ পরিবারের সদস্যরা অংশ নেন। সমাবেশের শুরুতে তাদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর সম্মিলিত সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির শিল্পী জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশ করে। সমাবেশে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের আয়োজনে আন্দোলনে উজ্জীবন করা গান, মুখাভিনয় অনুষ্ঠিত হয়।
বিএনপির মহসাচিব বলেন, আজকে আমাদের যেটা প্রয়োজন সবচেয়ে বেশি তা হচ্ছে, আমাদের যে ইস্পাত যে ঐক্য নিয়ে আমরা ১৬ বছর লড়াই করেছি সেই ঐক্যটা অটুট রাখা এবং কোনোমতেই চক্রান্তে পা না দেয়া। আমি বিএনপির নেতা-কর্মী ভাইদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই তারা শত প্রলোভনের মধ্যে, উস্কানির মধ্যে তারা শান্ত থেকেছে এবং এই দেশকে রক্ষা করবার জন্য তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
‘হায়নারদের প্রতিহত করতে হবে’
মির্জা ফখরুল বলেন, গতকাল (শুক্রবার) গোপালগঞ্জে আমাদের স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানীর ওপর আক্রমন করা হয়েছে, তার স্ত্রীর ওপর আক্রমন করা হয়েছে।আমি নিজে আজকে হাসপাতালে দেখে এসেছি। একজন নেতা শহীদ হয়েছে; এসব দেখে এটা পরিস্কার বুঝা যাচ্ছে এখনো তারা আবার হায়েনারের মতো লুকিয়ে আাছে যেকোনো সময়ে তারা আক্রমন করবে। সেই আক্রমনকে আমাদের প্রতিহত করতে হবে, আমাদেরকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে এই অঙ্গীকার করতে চাই, আমরা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করবার জন্য, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করবার জন্য আমরা সবাই কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে কাজ করব, অতীতেও করেছি আমরা। তবে একটা বিষয়ে সর্তক থাকবে হবে চক্রান্তের মধ্য দিয়ে আমাদেরকে কেউ যেন বিপথে নিয়ে যেতে না পারে,আমরা সেই পথ না হারাই। সামনে দিনগুলোতে আমরা পেছনে ফিরে না তাকাই। সামনের দিনগুলোতে গণতন্ত্রের পক্ষে, জনগনের পক্ষে, মানুষের পক্ষে এগিয়ে যাই.. এটাই হোক এখনকার শপথ।
‘অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রসঙ্গে’
ফখরুল বলেন, আজকে একটা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার পেয়েছি। এই সরকারের কাছে জনগনের প্রত্যাশা আকাশচুম্বি। জনগন মনে করে এই সরকার এমন একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড তৈরি করে দেবে, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সংস্কার করে এমন একটা জায়গায় আনবে যেন সত্যিকারের অর্থে একটা অর্থবহ নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আমরা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র, গণতান্ত্রিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি।
‘ক্ষতিপুরণ ও ভাতা প্রদানের দাবি’
মির্জা ফখরুল বলেন, এই ১৬ বছর ধরে এবং এই ছাত্র-জনতার আন্দোলনে যারা নিহত হয়েছেন তাদেরকে সকলকে রাষ্ট্রের তরফ থেকে ক্ষতিপুরন ও ভাতা দিতে হবে। এটা অত্যন্ত জরুরী ব্যাপার শুধু এখানে বসে কথা বলে আমরা অনুষ্ঠান করলেই হবে না এই বিষয়গুলো অত্যন্ত জোরে তুলে ধরতে হবে এবং সরকারকে বলতে হবে যে, এসব করতে হবে।
একই সঙ্গে ১৬ বছর ধরে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ওপর দায়েরকৃত এক লক্ষ ৪৫ হাজার মামলা প্রত্যাহার এবং গুম হওয়ার নেতা-কর্মীদের খুঁজে বের করার দাবিও জানান বিএনপি।
বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় এই স্মরণসভায় বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গনসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকী, গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর, জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা, ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট(এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, বিডিআর বিদ্রোহে নিহত মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের ছেলে রাকিক আহমেদসহ নির্যাতিত পরিবারের তিন সদস্য বক্তব্য রাখেন।
‘শহীদদের পরিবারের জন্য ফ্ল্যাট নির্মানের দাবি’
দৈনিক ইনকিলাবের সম্পাদক এএমএম বাহাউদ্দীন বলেন, শহীদদের জন্য আমাদের কিছু করতে হবে। ৩২ নং ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের ৬ বিঘা জমি আছে। ম্যাডামকে যেরকম কেন্টনমেন্ট থেকে বের করে দিয়ে সেখানে এপার্টমেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে, শহীদদের জন্য শুধু আমাদের অনুশোচনা করলে হবে না।সেখানে(ধানমন্ডিতে) এপার্টমেন্ট করে সকল শহীদদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
ওই স্বৈরাচার এখনো সক্রিয়, তার(শেখ হাসিনা) পিতা শেখ মুজিবের প্রতি মানুষের যে ঘৃণা-বিদ্বেষে কেন্টনমেন্টসহ সকল জায়গায় থেকে তার মূর্তি ফেলে দেয়া হয়েছে। সরকারি অফিস গুলো এখনো তার ছবি আছে… সরকার এখন পর্যন্ত সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত দেয়নি। এই ঘৃণা ও সংবিধান এক সাথে চলতে পারে না। আমরা সমগ্র বাংলাদেশ এক সাথে আছি।
আওয়ামী লীগকে জনগন মীরজাফর লীগ হিসেবে জানবে।
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি(বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ বলেন, আজকে কল্পনা করে দেখুন ৩৫ দিন আওয়ামী লীগ নাই..একটা মুরগীর খোপ তারা পায় নাই বলবে যে, আমরা আওয়ামী লীগ চালাবে। এটা হার নয়, এটা পতন…এটা আল্লাহর তরফ থেকে আসছে।
এখানে আমাদের ভাইয়েরা বলেছেন, আমরা বিচার চাই। আমি বলব, বিচার শুধু আরম্ভ হয়েছে ইনশাল্লাহ। এই বিচার এমন ভাবে হবে যে, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে সবাই মীর জাফর লীগ হিসেবে জানবে আগামী ১০০ বছরে। এই দলটি একটা রাজনৈতিক দলের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলেছে। আওয়ামী লীগের একাত্তর সালে যে অবস্থান ছিলো আজকে আওয়ামী লীগের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট চলে আসছে তারা কোনো মানুষের দল হতে পারে না।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিহিংসামূলক তৎপরতার কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘‘ ওরা তো পুলিশ দিয়ে খালেদা জিয়াকে তার বাড়ি থেকে বের করেছে আজকে বাংলাদেশের জনগন সেই গণভবনকে তাদের কবরের ভবন বানিয়ে দিয়েছে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনসহ ১৬ বছরের স্বৈরশাসনের আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও নির্যাতিত পরিবারকে সহযোগিতায় বিরোধী দলগুলোর লিয়াজো কমিটি গঠনের প্রস্তাব করেন পার্থ।
প্রতিকুল আবহাওয়ায় দিনভর বৃষ্টির মধ্যে বিএনপিসহ তার অঙ্গসংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী এবং গুম হওয়া পরিবারের সদস্যরা, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহতদের পরিবারসহ গত ১৬ বছরে আন্দোলনে বিএনপির নির্যাতিত ও পঙ্গু হওয়া নেতা-কর্মীরা শহীদ মিনারের বেদীতে বসে এই অনুষ্ঠানে দেখে।
অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, এজেডএম জাহিদ হোসেন, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমান উল্লাহ আমান, আফরোজা খান রীতা, খায়রুল কবির খোকন, হাবিব উন নবী সোহেল, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শিরিন সুলতানা, রাকিবুল ইসলাম বকুল, রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ছাত্র দলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছিরসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ভিন্নবার্তা ডটকম/আরজে/এন