ছাত্র হত্যা মামলায় গত ২২ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি মশিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে নিউমার্কেট থানা পুলিশ। ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা জুলাই হত্যাকাণ্ডে বিসিএসআইআর’র গাড়ি পুড়ানো মামলা ও বকশি বাজারে বিএনপি নেতাদের উপর হামলা মামলার অন্যতম আসামি।
শেখ হাসিনা সরকারের আমলে ছাত্রলীগের পরিচয়ে মশিউর বাগিয়ে নেন বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্ট (বিআরআইসিএম) এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদ; একই সাথে তার সহদর মোস্তাফিজুর রহমান নঈমকেও দিয়েছেন বিআরআইসিএম এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার পদে চাকুরি। এমনকি এই দুই ভাইয়ের স্ত্রীরাও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় নিয়োগ পেয়েছেন তৎকালিন শেখ হাসিনা সরকারের চাটুকারিতা করেই।
অভিযোগ উঠেছে মশিউরকে গুম করার পিছনে জড়িত বিআরআইসিএম এর বৈজ্ঞানিক প্রধান কর্মকর্তা মালা খান। অথচ মামলার নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সোহাগ মিয়া নামে এক ব্যক্তি বাদী হয়ে মশিউরের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন; কিন্তু মশিউরের সঙ্গে ছাত্রলীগের কোটায় চাকুরি পাওয়া বেশকয়েকজন সহকর্মী বলছেন, মামলা করেছেন মালা খান। ইতিমধ্যে তারা মিথ্যা অভিযোগ তুলে মালা খানকে লাঞ্চিত করে; অবাঞ্চিত ঘোষণা করা স্লোগানও দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালে শেখ হাসিনা সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় মশিউরের সঙ্গে ঐ প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সাবেক আরও ১২ ক্যাডার যোগদান করেছেন। সরাসরি ছাত্রলীগের রাজনৈতিক সঙ্গে জড়িত এমন কয়েক জন কর্মরত রয়েছেন। ৫ আগস্টের হত্যা মামলায় আসামি সাদ আল রেজাউন রহমান, মেহেদী হাসান টুটুল, শেখর বিশ্বাস অন্যতম মশিউরের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে আন্দোলনে সরব থাকতে দেখা যায়।
মশিউর তার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন “তথ্য প্রমাণ বলে, জিয়াই বঙ্গবন্ধুর মূল খুনী” তার সহকর্মীরা জানান মশিউর রহমান মুজিব বাদের প্রচারণায় সোচ্চার কর্মী। ছাত্রলীগের ভেরিফাই পেইজে গত ২৫ জানুয়ারি দাবি করা হয় মশিউর রহমান ফজলুল হক মসলিম হল শাখার সাবেক সহ-সভাপতি সেখানে আরও বলা হয় তাকে গ্রেপ্তার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী (পুলিশ)।
প্রশ্ন উঠেছে তাহলে গুম করা হল কিভাবে? পোস্টে আরও বলা হয়, যেহেতু সে সাহসী, সেহেতু সে ছাত্রলীগ কর্মী। ছাত্রলীগের এসব নেতাকর্মীদের কোন ভাবেই দাবিয়ে রাখা যাবে না। এরপর কিছু সময়ের মধ্যে সরিয়ে ফেলা হয় সেই পোস্ট।
এদিকে পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বিআরআইসিএম এর সাবেক ডিজি মালা খানের সহকর্মীরা বলছেন, যেখানে পুলিশ নিশ্চিত করেছে মশিউর কারাগারে রয়েছে। সেক্ষেত্রে মালা খানের বিরুদ্ধে গুম করার অভিযোগ তোলার অর্থ কি? মূলত মশিউরের কাছ থেকে যারা বিভিন্ন সময়ে সুবিধাগ্রহণ করেছেন তারাই মালা খানের বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লেগেছেন।
জানতে চাইলে বিআরআইসিএম এর বৈজ্ঞানিক প্রধান কর্মকর্তা মালা খান জানান, পুলিশ যাকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে। এরপরও তার সহকর্মীরা গুমের ভুয়া অভিযোগ তুলেছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ঢাকার নিউমার্কেট থানাধীন বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এতে প্রতিষ্ঠানটির ৪ কোটি ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী সোহাগ মিয়া গত ২৫ নভেম্বর নিউমার্কেট থানায় মামলা করেন। সেই মামলায় কারাগারে রয়েছেন মশিউর রহমান।