সৈয়দ আবদুল হাদী। বরেণ্য কণ্ঠশিল্পী। সম্প্রতি ধ্রুব মিউজিক স্টেশন থেকে প্রকাশিত হয়েছে তার নতুন দ্বৈত গান ‘বাবা ছেলের টান’। এই গান নিয়ে শ্রোতার প্রতিক্রিয়া এবং বর্তমান ব্যস্ততা ও অন্যান্য প্রসঙ্গে কথা হয় তার সঙ্গে-
এবারই প্রথম আপনি ও আসিফ আকবর যৌথভাবে কোনো গান করলেন। আপনাদেরও ‘বাবা ছেলের টান’ গানটি নিয়ে শ্রোতার প্রতিক্রিয়া কী?
অনেকে ভালো লাগার কথা জানিয়েছেন। কেউ কেউ গানে বাবা ও ছেলের চরিত্রে আমাকে ও আসিফকে পেয়ে কিছুটা অবাকও হয়েছেন। মাত্র কয়েকটি মিনিটের একটি গানে বাবা ও ছেলের সম্পর্কের গভীরতা, হৃদয়ের টান, দায়িত্ববোধ ও আবেগ-অনুভূতির প্রকাশ যেভাবে তুলে ধরা হয়েছে, তা নিয়েও অনেকে প্রশংসা করেছেন। কেউ আবার বলেছেন, এটি বাবা দিবসের প্রত্যাশিত একটি গান। অবশ্য এই কৃতিত্বটা গীতিকার সুহৃদ সুফিয়ান ও সুরকার কিশোর দাসের সমানভাবে প্রাপ্য।
আসিফের সঙ্গে গানে বাবা ও ছেলের চরিত্র তুলে ধরার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
সাধারণত সিনেমায় এই বিষয়টা বেশি হয়, শিল্পীদের বিভিন্ন চরিত্রের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে প্লেব্যাক করতে হয়। প্লেব্যাকের মতো এবার অডিওতে আমি ও আসিফ বাবা-ছেলের চরিত্রে কণ্ঠ দিয়েছি। তা ছাড়া আসিফকে নিয়ে তো নতুন করে কিছু বলার নেই। আল্লাহ প্রদত্ত অসাধারণ এক কণ্ঠ আছে ওর। তার চেয়ে বড় বিষয় ভার্সেটাইল শিল্পী হিসেবে আসিফ নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ওর গায়কি আমাকেও মুগ্ধ করে। ওর আগ্রহেই ‘বাবা ছেলের টান’ গানটি গাওয়া। ফিরোজা আপা [ফিরোজা বেগম] থেকে শুরু করে এই প্রজন্মের অনেকের সঙ্গে গেয়েছি। তার ধারাবাহিকতায় এবার গাইলাম আসিফের সঙ্গে। সব মিলিয়ে কাজটি আমাকে ভীষণ আনন্দ দিয়েছে।
করোনাকালে সময় কাটছে কী করে?
কয়েক মাস ধরেই ঘরে বন্দিদশায় আছি। এতদিন এ অবস্থা কী কারও ভালো লাগে? যদিও আমার ঘরের ভেতর কাজকর্ম আছে। সময় পার হয়ে যায়। চেষ্টা করছি একটা কিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকতে। যেন সবসময় চাঙ্গা থাকা যায়। প্রচুর পড়ছি। দেশ-বিদেশের অনেক ধরনের গান শুনছি। করোনায় যত সময় নিয়ে গান শুনছি, অতটা সময় নিয়ে এর আগে গান শোনার জন্য অবসর পাইনি। হাতে অফুরান অবসর। তাই লেখালেখিতেও অনেক সময় দিচ্ছি।
কোন বিষয় নিয়ে লেখালেখি চলছে?
সংগীতজীবনের স্মৃতিকথা লিখছি। এতে সংগীতজীবনের সঙ্গে আমার জীবনধারাও ওঠে আসবে। এই ধরনের লেখা আগে লেখা হয়নি। তাই সময় নিয়েই কাজটি করছি।
অনেকে বলেন, এখনকার গানে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়া যায় না- এ কথা কতটা সমর্থন করেন?
যারা এ কথা বলেন, তারা একেবারে ভুল নয়। আমরা দিন দিন গানের মূলধারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছি। মূলধারার সঙ্গে আমাদের মানসিকতা, ঐতিহ্য ও মননের সম্পর্ক। সেই সম্পর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছি বলেই সৃষ্টির মাঝে প্রাণের স্পন্দন খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। শিল্পীরাও সহজেই হারিয়ে যাচ্ছেন।
করোনাকালে অনলাইনে অনেকে কাজ করছেন। এটি কীভাবে দেখছেন?
ভালো উদ্যোগ। নতুন পরিস্থিতিতে সব বদলে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। অনলাইনে যা কিছু হচ্ছে ভালোই হচ্ছে। গান নিয়ে ছেলেমেয়েরা কিছু না কিছু করছে। করোনা পরিস্থিতি ভালো না হলে আপাতত নতুন কিছু করাও সম্ভব নয়।
আপনার এই দীর্ঘ সংগীত জীবনে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি নিয়ে ভেবেছেন কখনও?
আমার জীবনের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কখনও প্রাপ্তির আশায় কিছু করিনি। তার পরও কিন্তু আমার জীবনে প্রাপ্তিই বেশি, অপ্রাপ্তি কম। গানের মাধ্যমে লাখো মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি, পেয়েছি অসংখ্য স্বীকৃতি। এক জীবনে এটিই বা কম কিসে। সূত্র : সমকাল।
ভিন্নবার্তা ডটকম/এসএস