দেশে প্রতিবছর কোরবানিতে এক কোটির বেশি গবাদি পশুর চাহিদা থাকে। এর প্রায় অর্ধেকটা পূরণ করে থাকেন দেশীয় খামারিরা। বাকিটা আসে ভারত থেকে।
দেশের খামারিরা কোরবানির ৬-৭ মাস আগে থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেন। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। কোরবানি ঈদের চার মাস বাকি থাকতেই শুরু হয়ে গেছে এক ভয়াবহ সঙ্কট। করোনা মহামারির এই সঙ্কটের কারণে ভেঙে গেছে খামারিদের মন।
জানা গেছে, এবার দেশের খামারগুলোতে ৬০ লাখ গরু মোটাতাজাকরণে প্রস্তুতি ছিল। তবে করোনার কারণে এই কাজে ভাটা পড়েছে। কোরবানির গরুর বাজার নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। তাদের অর্ধেক গরু বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন খামারিরা।
গেলো কোরবানির ঈদে দেশীয় খামারিদের ৪৫ লাখ গরু বিক্রি হয়েছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবার খামারে ৬০ লাখ গরু মোটাতাজাকরণের কাজ চলছিল।
এদিকে সবকিছু বন্ধথাকায় গো-খাদ্যের দামও চড়া হয়েছে। এক মাস আগে এক বস্তা (৩৭ কেজি) গমের ভূসির দাম ছিল ১১শ টাকা। এখন তা বেড়ে হয়েছে সাড়ে ১৪শ টাকা। শুধু গমের ভূসি নয়। সব গো-খাদ্যের দাম গড়ে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। পরিবহন সঙ্কটে গো-খাদ্যের অভাবও দেখা দিয়েছে।
বড় বড় খামারগুলোতে সংকট দেখা দিয়েছে গরু পরিচর্যাকারী শ্রমিকেরও। অনেকে গ্রামের বাড়িতে অঘোষিত লকডাউনে গৃহবন্দি। তাই স্বল্প-পরিসরে লকডাউন শিথিল করার আকুতি খামারিদের।
রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো লিমিটেডে কোরবানির জন্য গড়ে প্রস্তুত করা হয় এক হাজার ৫০০ পশু। চড়া দামে গো-খাদ্য কিনে এসব পশুপালন করা হয়। এবার একটু বেশি গরু প্রস্তুত করা হচ্ছে। কিন্তু চলমান পরিস্থিতি দীর্ঘ হলে অনেক বেশি লোকসান গুণতে হবে এই খামার মালিকের।
অন্যান্য বছর আমেরিকা, ভারত ও মধ্যেপ্রাচ্য থেকে এমন সময় গরু, উট, দুম্বা ও ছাগল উড়োজাহাজে করে আমদানি করা হত। তবে এবার সেই প্রস্তুতিও বাতিল করা হয়েছে। একইসঙ্গে সাদিক এগ্রোর মতো অন্যান্য খামারেও কোরবানির পশু মোটাতাজাকরণ নিয়ে উভয় সংকট সৃষ্টি হয়েছে।
সাদিক এগ্রোর মালিক ইমরান হোসেন বলেন, ‘লকডাউনে মনে শান্তি নেই, অস্বস্তি কাজ করছে। দেশের অর্থনীতি ভালো না। মানুষ চাল-ডাল কিনবে না গরু কিনবে। দেশের চলমান সংকটের রেশ অনেক দিন থাকবে। গত বছর ৪৫ লাখ গরু কোরবানির ঈদে বিক্রি হয়েছিল। এবার ৬০ লাখ গরু মোটাতাজাকরণের কাজ চলছিল। দেশের এমন অবস্থা চলতে থাকলে গত বছরের থেকে কোরবানির গরু কম বিক্রি হবে। আমরা ধরে নিয়েছি ৩০ লাখ গরু অবিক্রীত থাকবে। খামারিদের এবার মরণ ছাড়া গতি নেই। কসাইয়ের দামে গরু বিক্রি করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোরবানির গরু কেনার বিষয়ে ক্রেতাদের দীর্ঘ প্রস্তুতি থাকে। যখন ক্রেতারা কোরবানির গরু কেনার টাকা সঞ্চয় শুরু করেন তখনই শুরু হলো লকডাউন।’
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর বলছে, চলতি বছরে দেশীয় পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মেটানো সম্ভব। চলতি সপ্তাহে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশু নিয়ে একটা ডাটা প্রস্তুত করা হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, দেশে মোট গরুর সংখ্যা ২ কোটি ৪০ লাখ। সবমিলিয়ে এবারও কোরবানির জন্য ১ কোটি ২০ লাখের ওপরে প্রস্তুত রয়েছে। গত কোরবানির ঈদে ১ কোটি ১৭ লাখ গরু, ছাগল, মহিষ প্রস্তুত ছিল। এর মধ্যে গরুর সংখ্যা ছিল ৪৫ লাখ। কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ। ১০ লাখ পশুর যোগান বেশি ছিল চাহিদা থেকে। সে হিসেবে এবারও বাইরের পশু ছাড়া চাহিদা মেটানো সম্ভব।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দাবি, করোনা ভাইরাসের কারণে কোরবানির পশু ৫ থেকে ১০ শতাংশ কম বিক্রি হবে।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (খামার) ড. এ বি এম খালেকুজ্জামান বলেন, ‘করোনার ফলে দেশে লকডাউন চলছে। ফলে গ্রামের প্রান্তিক এলাকা থেকে অনেক খামারে গরু আসতে সমস্যা হচ্ছে। সাপ্লাই চেইনের সংকট চলছে। আমাদের হাতে সম্প্রতি যে ডাটা এসেছে তাতে দেখা গেছে কোরবানির জন্য ৬০ লাখ গরু প্রস্তুত। তবে গত বছরের থেকে এবার কিছুটা কম কোরবানি হবে।’
ভিন্নবার্তা/এমএসআই