নেত্রকোনার কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্ধের সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কাজ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক ওই সমস্ত অভিযোগ মিথ্যে ভিত্তিহীন বলে দাবী করছেন।
জানা গেছে, জেলার কলমাকান্দা উপজেলা সদরে ১৯৪২ সালে শিক্ষানুরাগী বর্তমান প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেনের বাবা মোঃ মোফাজ্জল হোসেন এলাকাবাসীকে নিয়ে সাড়ে ৪ একর জমির ওপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তী সময়ে বিদ্যালয়ের সামনের রাস্তার জন্য কিছু জমি ছেড়ে দিতে হয়। ওই অংশ বাদ দিয়ে তিন একর ৯৩ শতাংশ বিদ্যালয়ের জমি থাকে। বিদ্যালয়টি উন্নয়নের জন্য নানা অবকাঠানো নির্মাণ করা হয়।
গত ২০১৫ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয় করনের জন্য চিঠি আসে। পরবর্তীতেতে ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল বিদ্যালয়টি জাতীয় করন করা হয়। জাতীয়করণের পর বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক বেতন ভাতা ও ঈদ বোনাস দেয়ার জন্য প্রধান শিক্ষকের ওপর চাপ সৃষ্টি করেন। যা সরকারী বিধি সম্মত নয় বলে দাবী করে প্রধান শিক্ষক তাদের দাবী মেনে নেন নি। পরবর্তী সময়ে ওই সমস্ত শিক্ষক কর্মচারীরা গত ২১ জুন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয় অভিযোগ করেন। অভিযোগের অনুলিপি দেয়া হয় স্থানীয় এমপি, ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা পরিচালক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড ময়মনসিংহের চেয়ারম্যান, ময়মনসিংহ দুর্নীতি দমন কমিশনের মহা পরিচালক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার কলমাকান্দা, জেলা শিক্ষা অফিসারসহ বিভিন্ন দপ্তরে।
অভিযোগগুলো হচ্ছে ২০১৮-২০১৯ শিক্ষা বর্ষে জেএসসি এবং ২০১৯- ২০২০ সালে এসএসসি পরীক্ষাদের নিকট হতে স্পেশাল ক্লাসের কথা বলে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩০০/- টাকা করে আদায়, বিধি বহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ের তহবিল থেকে মোবাইল ভাতার নাম করে প্রচুর টাকা আদায়, অপ্রয়োজনীয় ঘর মেরামতের নামে ২০১৯ সালে বিদ্যালয় তহবিল থেকে বিপুল পরিমান টাকা উত্তোলন, দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ক্রয়ের নামে প্রচুর অতিরিক্ত টাকা উত্তোলন, মাসিক আপ্যায়নের নামে সরকারি বেধে দেয়া অর্থের চেয়ে জ্জ গুন টাকার বেশি উত্তোলনসহ বিভিন্ন অনিয়মের কথা উল্লেখ করা হয়।
কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীন পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ক্রয় কমিটির আহ্বায়ক মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, সরকারি বিধি অনুসরন করে প্রশ্নপত্র ক্রয় করা হয়েছে। এতে কোন ধরনের অনিয়ম করা হয়নি। কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক এ কে এম এমদাদুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ আমরা করেছি। এরই মধ্যে তদন্তও হয়েছে। অভিযোগ সত্য না হলে তিনি তার সপক্ষে প্রমান দেবেন।
কলমাকান্দা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ইলিয়াস হোসেন বলেন,আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের পর বিদ্যালয়ে তিনটি ল্যাব স্থাপন করেছি। ২০১০ সাল থেকে বিদ্যালয়ের এসএসসি ও অন্যান্য ফলাফল খুবই ভাল। আমি প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদানের সময় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের ৯ টি হিসেবে কোন টাকা ছিল না। এখন বিদ্যালয়ের ২৭ টি হিসেবে ৭৫ লাখ টাকার উপরে আছে। বিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষক অবৈধ সুবিধে আদায়ের জন্য আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করছে। তারা আমাকে নানাভাবে হয়রানী করছে। আমার বিরুদ্ধে মানববন্ধন পর্যন্ত করেছে।বিদ্যালয়ের উন্নতি ছাড়া আমি কখনো কোন কিছু চিন্তা করি নাই।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সোহেল রানা বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত হয়েছে। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা এ ব্যাপারে তদন্ত করেছেন। এর বেশি কিছু আমি বলতে পারব না।
ভিন্নবার্তা/এসআর