ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ওয়ারী এলাকার কোন কোন সড়ক এবং গলি লকডাউন করা হবে, তা নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সিটি করপোরেশন থেকে যেসব রাস্তা লকডাউন করার কথা বলা হচ্ছে, বাস্তবে ওয়ারীতে এমন কয়েকটি রাস্তার অস্তিত্ব নেই। দুই-একটি রাস্তার নাম কিছুটা মিললেও তা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। ফলে কোন এলাকা লকডাইন হবে, আর কোনটি হবে না— তা নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে বিভ্রান্তি ও ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। সিটি করপোরেশন বলছে, স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হয়ে তাদের কাছে যে চিঠি ও ম্যাপ এসেছে, সে অনুযায়ী তারা পদক্ষেপ নিচ্ছে।
লকডাউনের জন্য যেসব সড়ক ও গলির নাম ঘোষণা করা হয়েছে, সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে এলাকাবাসী অনেকেই তা জানাতে পারেননি।
ওয়ারী লকডাউন করার জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনকে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে তিনটি সড়ক ও পাঁচটি গলির নাম উল্লেখ আছে। সড়কগুলো হচ্ছে— টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড, ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে (জয়কালী মন্দির থেকে বলধা গার্ডেন)। আর গলিগুলো— লালমিনি রোড, হরে রোড, ওয়ার রোড, রানকিন রোড ও নওয়াব রোড। জানা গেছে, লকডাউন এলাকার সড়ক বা গলির নাম ও ম্যাপিং তৈরি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর।
বুধবার (১ জুলাই) সরেজমিনে গেলে ওয়ারীর নবাব স্ট্রিটের আবুল কালাম ও আরাফাত হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ওই চিঠিতে টিপু সুলতান রোড, জাহাঙ্গীর রোড ও ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে (জয়কালী মন্দির রোড থেকে বলধা গার্ডেন) লকডাউনের কথা বলা হয়েছে। অথচ ওয়ারীতে জাহাঙ্গীর রোড এবং ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে নামে কোনও সড়ক নেই। তবে ওয়ারীতে জয়কালী মন্দির রোড ও বলধা গার্ডেন রয়েছে। এ ছাড়া গলি হিসেবে লালমিনি রোড, হরে রোড, ওয়ার রোড, রানকির রোড ও নওয়াব রোডের কথা বলা হয়েছে।
ডিএসসিসি’র সচিব দফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, এই রাস্তা ও গলির নাম লিখতে মূলত বানানে ভুল করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে গলির নামগুলোই বেশি ভুল হয়েছে। যেমন, চিঠিতে আছে গলির নাম লালমিনি রোড, আসলে এটা হবে লারমিনি স্ট্রিট। এছাড়া রানকিন রোডের বদলে হবে র্যাংকিং স্ট্রিট; নবাব রোড নয়, হবে নবাব স্ট্রিট। এছাড়া চিঠিতে উল্লিখিত হরে রোড ও ওয়ার রোড নামে ওয়ারীতে কোনও রোড নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডিএসসিসি’র মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাজনীন ওয়ারেস, ডিএনসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহ মো. এমদাদুল হক ও প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শরীফ আহমেদকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। পরে সবাইকে এসএমএস পাঠানো হলে একমাত্র ডিএসসিসির মেয়র ছাড়া অন্যরা সাড়া দেননি। তবে মেয়র তার ফিরতি বার্তায় বিষয়টি সম্পর্কে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা বা প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার জন্য পরামর্শ দেন।
জানতে চাইলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের বলেন, ‘হরি স্ট্রিট, ওয়্যার স্ট্রিট, লারমিনি স্ট্রিট, নবাব স্ট্রিট ও র্যাংকিং স্ট্রিট বলে জানতে পেরেছি।’ বাকি তথ্য নিশ্চিত হওয়ার জন্য প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।
ওয়ারী এলাকাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়েছে। এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলো দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। তবে সংরক্ষিত আসন ১৩ নম্বরের কাউন্সিলর শাহিনুর বেগম বলেন, ‘আসলে যারা নামগুলো লিখেছেন তারা একটু ভুল করেছেন। আর এই এলাকার যে সড়কগুলো আছে, সেগুলোর নাম পরিবর্তন হয়ে একেকটির একেক নাম হয়েছে, যে কারণে একটু সমস্যা হচ্ছে।