রাজধানীর জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের আট চিকিৎসকসহ ৩০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখানকার ১৫ চিকিৎসক ও ৩৭ নার্সকে কোয়ারেন্টিনে পাঠিয়েছেন।
এর আগে সাতজন চিকিৎসকের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল জানিয়ে ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক কাজল কুমার কর্মকার গণমাধ্যমকে বলেন, মঙ্গলবার আরও একজনের নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ এসেছে।
হাসপাতালটিতে আসা রোগীদের মধ্যে ১০ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ার পর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত হতে শুরু করেন বলে জানান তিনি।
কাজল কুমার বলেন, ওই ১০ রোগীর মধ্যে একটি শিশুসহ দুজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিদের করোনাভাইরাস চিকিৎসার নির্ধারিত হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক মীর জামাল উদ্দিন বলেন, এসব রোগী হার্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে আসেন। তাদের সেবা দিতে গিয়ে ডাক্তার-নার্সসহ অন্যরা আক্রান্ত হন।
ডা. কাজল জানান, আট চিকিৎসক ছাড়া আক্রান্তদের মধ্যে ১৬ জন নার্স, দুজন ওয়ার্ড মাস্টার, তিন ওয়ার্ড বয় এবং একজন আনসার সদস্য রয়েছেন।
গত বুধবার এ হাসপাতালের এক রোগীর দেহে কোভিড-১৯ ধরা পড়ার পর তার সেবায় থাকা ডাক্তারসহ অন্যদের নমুনা পরীক্ষা করতে দেয়া হয়।
এরই মধ্যে আরও বেশ কয়েকজন রোগীর উপসর্গ দেখে পরীক্ষা করাতে গিয়ে ভাইরাসের উপস্থিতি ধরা পড়ে।
সব মিলিয়ে ১০৭ জনের নমুনা পরীক্ষার জন্য দেয়া হয়েছে জানিয়ে ডা. কাজল বলেন, তাদের মধ্যে ১৫ জন চিকিৎসক এবং ৩৭ নার্স হোম কোয়ারেন্টিনে আছেন।
এদিকে দেশে করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা কমলেও দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা আরও বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৪৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে; যে সংখ্যা এখন পর্যন্ত একদিনে সর্বোচ্চ।
এ নিয়ে মোট ৬ হাজার ৪৬২ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হলেন।
এই সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন তিন জন। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫৫ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা এ কথা জানান।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ৬ হাজার ৪৬২টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। পরীক্ষা করা হয়েছে ৪ হাজার ৩০৯টি। এর মধ্যে ৫৪৯ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৩ জন। আর সুস্থ হয়েছেন ৮ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার হার গত দিনের তুলনায় ১৩.৬৪ শতাংশ বেশি বলে জানান এই চিকিৎসক।
ডা. নাসিমা বলেন, মৃতদের মধ্যে তিন জনেরই বয়স ষাট বছরের বেশি এবং এরা সবাই ঢাকার বাসিন্দা।
এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে আইসোলেশনে আছেন ১১১ জন এবং এ পর্যন্ত মোট আইসোলেশনে আছেন ১ হাজার ২৪৮ জন।
এই সময়ে মধ্যে আইসোলেশন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৪৭ জন এবং এ পর্যন্ত মোট ছাড় পেয়েছেন ৭৮৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন ২ হাজার ৩৯২ জন। এ পর্যন্ত হোম এবং প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে আছেন এক লাখ ৮১ হাজার ৭৯৩ জন।
এই সময়ের মধ্যে হটলাইনে ফোনকল এসেছে ৭২ হাজার ৪৪৭টি। এদের মধ্যে ফোন ও ওয়েবসাইট মিলিয়ে ৩১ হাজার ১২৪ জনকে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর চীনের উহান শহরে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। দেশে প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হন ৮ মার্চ এবং এ রোগে আক্রান্ত প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
২৫ মার্চ প্রথমবারের মতো রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) জানায়, বাংলাদেশে সীমিত পরিসরে ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বা সামাজিকভাবে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হচ্ছে।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই