কয়েকদিন ধরে সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার এক হোটেল বয় (৩৮)। গত সোমবার দুপুরে খবর পেয়ে তার নমুনা সংগ্রহ করে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু রাতেই তিনি মারা যান। এ ঘটনায় তারসহ আশপাশের সাতটি বাড়ি ‘লকডাউন’ করেছে উপজেলা প্রশাসন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শ্যামগঞ্জ উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেডিক্যাল অফিসার ওয়াহীদুর রহমান খান মামুন। এদিকে করোনা ভাইরাস সন্দেহে দেশের বিভিন্ন স্থানে ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে জানা যায়।
খুলনা : জেলার রূপসা উপজেলার দেবীপুর গ্রামে করোনার উপসর্গ নিয়ে ষাটোর্ধ্ব এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আনিসুর রহমান জানান, জ্বর-সর্দি, কাশিতে আক্রান্ত ওই বৃদ্ধা সাত দিন আগে তার নাতির সঙ্গে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়িতে আসেন। তিনি তথ্য গোপন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চিকিৎসাও নেন। এর মধ্যে গত সোমবার মধ্যরাতে বাড়িতে তিনি মারা যান। মৃত বৃদ্ধা ও তার নাতির নমুনা সংগ্রহ করে খুলনা মেডিক্যাল কলেজের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। সেই সঙ্গে যারা ওই নারীর সংস্পর্শে এসেছিলেন তাদের তালিকা করে হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হচ্ছে।
টাঙ্গাইল : করোনা উপসর্গ নিয়ে টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে ও কালিহাতীতে দুজনের মৃত্যু হয়েছে জানা যায়। এর মধ্যে গতকাল সকালে ঘাটাইলের আনেহলা ইউনিয়নে ৭৫ বছরের এক বৃদ্ধ মারা গেছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান তালুকদার বলেন, মৃত ব্যক্তি ১০-১২ দিন আগে তবলিক জামাত থেকে বাড়িতে ফিরেন। এর পরই তিনি জ্বর, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়েন। মৃত ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাইফুর রহমান খান। সেই সঙ্গে তিনটি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। এদিকে কালিহাতী উপজেলায় ৫৫ বছর বয়সের এক দিনমজুর গতকাল দুপুরে মারা গেছেন। প্রতিবেশীরা জানান, কয়েকদিন ধরেই তিনি জ্বর, ঠা-া ও পাতলা পায়খানায় ভুগছিলেন। তবে তিনি করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না বলে জানান উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপা।
ঝালকাঠি : জ্বর, কাশি, গলাব্যথা নিয়ে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় ৬ বছরের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তবে পরিবারের দাবি, শিশুটি কিডনি সমস্যায় ভুগছিল। তার চিকিৎসা চলছিল বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। সেখানেই গতকাল মঙ্গলবার সকালে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তাদের বাড়ি লকডাউন করেছে উপজেলা প্রশাসন। সেই সঙ্গে পরিবারের ১২ জনকে হোম কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিকে ওই শিশুর সংস্পর্শে থাকা তার কিশোর এক খালাতো ভাই জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন শ্যামল কৃষ্ণ হাওলাদার জানান, স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা ওই বাড়িতে যাওয়ার আগেই স্বজনরা শিশুটির লাশ দাফন করে ফেলে। তবে লোকজন যাতে বাড়ির বাইরে যেতে না পারে, সে জন্য লকডাউন করা হয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ : গোমস্তাপুর উপজেলার চৌডালা ইউনিয়নে জ্বর ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে সোমবার রাতে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় পুরো ইউনিয়নকেই লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। স্থানীয়রা জানান, ওইদিনই ঢাকা থেকে বাড়ি এসেছিলেন ওই ব্যক্তি। তার মৃত্যু খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে গিয়ে গভীর রাতেই দাফন সম্পন্ন করে।
কিশোরগঞ্জ : শ্বাসকষ্ট নিয়ে বাজিতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আইসোলেশনে থাকা এক রিকশাচালক গতকাল সকালে মারা গেছেন। এ ঘটনায় করোনা সন্দেহে তার পরিবারকে হোম কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মুজিবুর রহমান জানান, ওই রোগী শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসোলেশনে ভর্তি ছিলেন। তার শরীরের নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
গাজীপুর : কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শ্বাসকষ্ট নিয়ে আবদুল কাইয়ুম নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকালে তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকার আইইডিসিআরে পাঠানো হয় বলে জানিয়েছেন জেলা সিভিল সার্জন। তবে হাসপাতালে ভর্তির সময় ওই বৃদ্ধ শুধু তার বাবা মৃত আব্দুর রশিদ বলতে পারলেও ঠিকানা জানাতে পারেননি।
ময়মনসিংহ : জ্বর ও সর্দি-কাশিতে ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরের দিকে মারা যাওয়া ওই ব্যক্তির বয়স ছিল ৪২ বছর। তিনি ঢাকায় রিকশা চালাতেন। এক সপ্তাহ আগে জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে গ্রামে ফিরেছিলেন। অন্যদিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় শ্বাসকষ্ট নিয়ে এক যুবকের (৪০) মৃত্যু হয়েছে।
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ) : চিকিৎসা নিয়ে গতকাল সকালে বাড়ি ফেরার পথে কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে এক মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভের (৩০) মৃত্যু হয়েছে। জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টে ভোগা ওই যুবককে চিকিৎসা দেওয়া উপজেলার রেনেসাঁ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড হাসপাতাল লকডাউন ঘোষণা করেছে প্রশাসন। সেই সঙ্গে মৃতদেহ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে বলে জানান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তানভীর হাসান। সূত্র: দৈনিক আমাদের সময়।
হবিগঞ্জ : চুনারুঘাটের এক বৃদ্ধ (৬০) সোমবার শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা গেছেন। তবে প্রশাসন বলছে, তার অন্যান্য শারীরিক সমস্যা ছিল। তবু বিষয়টি নিশ্চিত হতে নমুনা সংগ্রহ করে করোনা পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
ভিন্নবার্তা ডটকম/ এসএসআই