চীনা বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এমন একটি উদ্ভিদ তৈরি করেছেন যা রাতের অন্ধকারে আলো ছড়াতে সক্ষম। এই উদ্ভিদগুলোর পাতা বিশেষ ধরনের স্ট্রনশিয়াম অ্যালুমিনেট দিয়ে ইনজেকশন করা হয়েছে, যা আলো শোষণ করে ধীরে ধীরে তা নির্গত করে। স্ট্রনশিয়াম অ্যালুমিনেট সাধারণত অন্ধকারে জ্বলে ওঠা খেলনায় ব্যবহৃত হয়।
সাউথ চায়না অ্যাগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটির জীববিজ্ঞানী শুটিং লিউ জানান, ‘অ্যাভাটার’ চলচ্চিত্রের উজ্জ্বল উদ্ভিদের মতো আমরা পরীক্ষাগারে বাস্তবে এমন উদ্ভিদ তৈরি করতে চেয়েছি যা রাস্তার আলো বা পরিবেশগত আলো হিসাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। আমাদের লক্ষ্য হলো রাতের শহর, বাগান বা পাবলিক স্পেসগুলোকে উদ্ভিদ দ্বারা আলোকিত করা।লিউ এবং তার দল ‘ইচেভেরিয়া মেবিনা’ নামক সাকুলেন্ট উদ্ভিদের পাতায় স্ট্রনশিয়াম অ্যালুমিনেট ইনজেকশন করেছেন। এতে উদ্ভিদ লাল, নীল এবং সবুজ আলো ছড়াতে সক্ষম হয়েছে। গবেষকরা সাধারণ জিন-এডিটিং পদ্ধতির পরিবর্তে ন্যানোপার্টিকেলের মাধ্যমে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করেছেন, যা উদ্ভিদের প্রাকৃতিক সবুজ আভা ছাড়াও নতুন রঙের আলো তৈরি করতে সক্ষম।
গবেষকরা তাদের ধারণা পরীক্ষার জন্য ৫৬টি উদ্ভিদ ব্যবহার করে একটি সবুজ দেয়াল তৈরি করেছেন। পরীক্ষা অনুযায়ী, এই দেয়াল থেকে এত আলো নির্গত হয় যে চার ইঞ্চি দূর থেকে লেখা, ছবি এবং একটি মানুষ সহজেই দেখা যায়।
একবার ইনজেকশন দেওয়ার পর উদ্ভিদগুলো কয়েক মিনিটের জন্য সূর্যালোকের নিচে রাখলে, তা প্রায় দুই ঘণ্টা আলো ছড়াতে সক্ষম হয়। লিউ জানান, উদ্ভিদগুলোকে সূর্যালোকের সংস্পর্শে বারবার রিচার্জ করা যায়। ফলে সূর্যালোক না থাকলেও উদ্ভিদগুলো আলো ছড়াতে থাকে। ২৫ দিন পরও তাদের আলো নির্গমন ক্ষমতা ধরে রাখা সম্ভব।
তবে এই প্রযুক্তিতে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। লিউ স্বীকার করেন যে, স্ট্রনশিয়াম অ্যালুমিনেট উদ্ভিদের টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। তবে তাদের গবেষক দল একটি রাসায়নিক আবরণ তৈরি করেছেন যা উদ্ভিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।
কিছু বিজ্ঞানী এ প্রযুক্তির কার্যকারিতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান ও প্রাণরসায়ন বিশেষজ্ঞ জন কার বলেন, গবেষণাটি আকর্ষণীয়, কিন্তু এটি বর্তমান উদ্ভিদ প্রযুক্তির চেয়ে অনেকটাই এগিয়ে এবং উদ্ভিদসমূহের সহ্য করার ক্ষমতার বাইরে হতে পারে।
লিউও স্বীকার করেন, এখন উদ্ভিদগুলো ব্যবহারিক আলোর জন্য যথেষ্ট উজ্জ্বল নয়। এছাড়া উদ্ভিদ ও প্রাণীর জন্য আফটারগ্লো কণার নিরাপত্তা যাচাই এখনও চলমান। বর্তমানে এগুলো মূলত আলংকারিক প্রদর্শনী বা রাতে শোভাময় আলো হিসেবে ব্যবহারযোগ্য।
তবে তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, ভবিষ্যতে আলো আরও উজ্জ্বল এবং দীর্ঘস্থায়ী করা সম্ভব হলে, আমরা পাবলিক পার্ক, বাগান বা রাস্তা এমনভাবে আলোকিত করতে পারব যেখানে উদ্ভিদগুলো রাতের অন্ধকারে নিজেই আলো ছড়াবে।
সূত্র: সিএনএন
Editor: Rumana Jaman Shachi
Raipura House (2nd Floor), 5/A, Outer Circular Road
West Malibag, Dhaka-1217
Communication
E-mail: vinnabarta@gmail.com
Phone:+8802222220051