করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে কর্মপরিকল্পনা ও আর্থিক সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা যথেষ্ট নয় বলে মনে করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
প্রধানমন্ত্রীর এ প্যাকেজের সঙ্গে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি, কর রেয়াত, কর হার কমানো ও ঋণের সুদ হার কমানোর মতো পদক্ষেপ নেওয়া দরকার বলে মনে করেন তিনি।
রোববার (৫ এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবের সম্ভাব্য বিরূপ প্রভাব উত্তরণে কর্মপরিকল্পনা ও আর্থিক সহায়তায় ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
এ বিষয়ে ড. দেবপ্রিয় বলেন, যথোপযুক্ত সময়ে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া এ বার্তাটি আমাদের নাগরিকদের জন্য খুই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সবাই আশঙ্কা করছে আমরা একটি মন্দার দিকে যাবো। এ সময়ে অর্থনীতিকে সচল রাখতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে যাতে কারও চাকরি না হারায় তার জন্য তারল্য সঞ্চালনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, এর সঙ্গে যেটা হচ্ছে সেটা হলো তারল্যকে যদি উৎপাদনশীল খাতে পৌঁছানো যায়। একটি মাত্র পদক্ষেপ ব্যাংকিং খাতের মধ্য দিয়ে যথষ্ট নয়। অর্থনীতিকে চাঙা করার জন্য আর্থিক পদক্ষেপ দরকার পড়ে। এখন দেখার বিষয় আগামী কর রেয়াতের ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা আসবে কিনা। সেটা প্রাতিষ্ঠানিক বা ব্যক্তিখাতের কর হোক। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি কিভাবে বাস্তবায়ন হয়, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোকে সমর্থন দেওয়ার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের ব্যয়গুলো কিভাবে আসে। সুদের হার কমানো দরকার এটা আমাদের প্রয়োজন। একইভাবে দেখা দরকার করের হারের কি হবে।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এসব কিছুর চেয়ে কম-বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয় যে আমাদের টাকার বিনিময় হারটা কি হবে। রেমিটেন্সের পতন ঘটছে, সেহেতু টাকার ওপর চাপ বাড়বে। রপ্তানির পতন ঘটছে, টাকার ওপর চাপ বাড়বে। তাই টাকার বিনিময় হারটা আগামীতে কিভাবে সামঞ্জস্য হবে সেটা যেন আবার মূল্যস্ফীতিতে না চলে যায় এটাও দেখার বিষয়। অর্থাৎ সামনে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দক্ষতার দাবি করবে। শুধু নীতি ঘোষণার ভেতরে যেন সীমিত না থাকে।
তিনি বলেন, সঠিক ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কাছে যাতে অর্থটি পৌঁছায়। আমাদের দুর্বল প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, বিভিন্ন কায়েমী স্বার্থের ভেতরে বিভিন্ন উৎপাদনশীল খাত ও শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো গুরুত্বপূর্ণ।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, এখন প্রশ্ন হচ্ছে তারল্য দিতে চাচ্ছেন পৌঁছাতে চাচ্ছে স্বল্পমূল্যে প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত তারল্য সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে পৌঁছার প্রক্রিয়া কতখানি যথেষ্ট হবে বা দক্ষতার সঙ্গে পৌঁছানো যাবে। কারণ ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকদের জন্য মজুরি হিসেবে যে টাকাটা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে, সেটি ডিজিটাল পদ্ধতি দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক হিসাবে বিভিন্ন ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখন দেখার বিষয় এটি কিভাবে জায়গামতো পৌঁছায়। সামষ্টিক অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে আরেকটি বিষয়ে আমার মতে এ তারল্য তো আসতে হবে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে। সরকারের পক্ষ থেকে তারল্য ছাড় করার ট্রেজারি বিল সেই অর্থে কিনেও নিতে পারে। কিন্তু ব্যাংকিং খাতের এ মুহূর্তে যে পরিস্থিতি সেই ব্যাংকিং খাতের পক্ষে দক্ষতার সঙ্গে যথাসময়ে এ তারল্য পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিকল্পনা ও ব্যবস্থা দরকার। ব্যাংকখাতের সংস্কার ব্যতিরকে সেটার ক্ষেত্রে কি হবে সেটা কিন্তু দুশ্চিন্তা রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যে তারল্য সরবরাহ করার ঘোষণা দিয়েছেন সেটা অনেক গরিব দেশের জিডিপির দুই শতাংশের ওপরে। অনেক গরিব দেশের পক্ষে সাহসের সঙ্গে ঘোষণা করা কষ্টকর। সাহসের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী সেই ঘোষণা দিয়েছেন বলেন আমি মনে করি। প্রধানমন্ত্রী যে পদক্ষেপ নিয়েছেন এটি যথোপযুক্ত এবং সময়োপযোগী। এটার সঙ্গে আরও যেটা বলা দরকার যে প্রধানমন্ত্রী করোনা ভাইরাসের কারণে অর্থনীতিতে যে চাপ সৃষ্টি হচ্ছে সেগুলো সঠিকভাবে চিহ্নিত করেছেন।
ভিন্নবার্তা/এমএসআই